ক্রীড়া ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতী করোনার হানায় অবশেষে স্থগিত হয়ে গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। কঠিন বায়ো-বাবল সুরক্ষার মধ্যেই দলগুলোর খেলোয়াড়দের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচের এই জমজমাট টি-টোয়েন্টি ফ্রাঞ্জাইজি টুর্নামেন্ট আচমকা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বেশ ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে বিসিসিআই। প্রশ্ন উঠেছে, সে ক্ষতির পরিমাণ কত? ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর, আইপিএল স্থগিত করে রাতারাতি ভিখারি হতে বসেছে সৌরভ গাঙ্গুলীর বোর্ড। দেশটির শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোর অন্যতম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বাংলা ভার্সনে ‘আইপিএল বন্ধে ক্ষতি কোটি কোটি টাকা! কার্যত ভিখারি হয়ে গেল সৌরভের বোর্ড’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ জানতে ইতোমধ্যে অংক কষতে বসে গেছেন বিসিসিআইয়ের কর্মকর্তারা। বিসিসিআইয়ের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, আইপিএল মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ায় ব্রডকাস্টিং এবং স্পন্সরশিপ থেকে প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় বোর্ডের এক শীর্ষকর্তা সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন, আইপিএলের আচমকা স্থগিতের কারণে বিসিসিআইয়ের দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হতে চলেছে। আমার হিসাবে এই ক্ষতির অঙ্ক ২২০০ কোটি টাকা। তিনি জানান, এর মধ্যে সম্প্রচারকারী স্টার স্পোর্টসকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর ব্যাখ্যায় তিনি জানান, ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে স্টারের ৫ বছরের চুক্তির পরিমাণ ১৬ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। বার্ষিক হিসাবে যার পরিমাণ ৩ হাজার ২৬৯.৪ কোটি টাকা। ৬০ ম্যাচ খেলা হলে প্রতি ম্যাচ থেকে বোর্ডের অ্যাকাউন্টে ঢুকত ৫৪.৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে হয়ে যাওয়া ২৯ ম্যাচের জন্য বিসিসিআইকে ১৫৮০ কোটি টাকা দেবে স্টার স্পোটর্স। অর্থাৎ টুর্নামেন্টের সব খেলা শেষে বোর্ডের অ্যাকাউন্টে ঢুকত ৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। কিন্তু এখন সেটি না হওয়ায় বোর্ডের ক্ষতি ১৬৯০ কোটি টাকা। একইভাবে আইপিএলের টাইটেল স্পন্সর ভিভোর সঙ্গে ৪৪০ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে ভারতীয় বোর্ডের। টুর্নামেন্ট প্রথম রাউন্ডের অনেক আগেই স্থগিত হয়ে যাওয়ায় এখন সেই অঙ্ক থেকে অনেক কম টাকা পাবে বোর্ড। টাইটেল স্পন্সর ছাড়াও সহযোগী স্পন্সর- আনএকাডেমি, ড্রিম-১১, ক্রেড, আপস্টকস, টাটা মোটরস- প্রত্যেকে বোর্ডকে ১২০ কোটি টাকা দিয়ে থাকে। সেখানেও অনেক কম টাকাই জুটবে বিসিসিআইয়ের কপালে। উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত আট ফ্র্যাঞ্চাইজির চারটিতে করোনা পজিটিভ হয়েছেন খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফরা। যদিও করোনায় মৃতের চিতার আগুনের ধোঁয়ায় যখন দিল্লি, চেন্নাইয়ের আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন, তখন বায়ো বাবলে ভরসা করেই এতোদিন ধরে চলছিল আইপিএল। করোনাভীতিতে বেশ কয়েকজন বিদেশি তারকাও ভারত ছেড়ে চলে যান। ডাক উঠে আইপিএল স্থগিতের। কিন্তু বায়ো-বাবল পরিবেশই সবচেয়ে নিরাপদ দাবি করে টুর্নামেন্ট চালিয়ে যাচ্ছিল বিসিসিআইয়ের। কিন্তু এমন সুরক্ষা কবজকে ডিঙিয়ে খেলোয়াড়দের করোনায় আক্রান্তের পর টুর্নামেন্ট শেষশেষ স্থগিত হলো।
Leave a Reply